এমপি বাবা’র দাপটে বেপরোয়া ফারাজ করিম চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজানের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। চলন-বলনে যেন নিজ সাম্রাজ্যের অঘোষিত যুবরাজ। দরবার বসিয়ে বিচার করতেন সবার। লোক দেখানো মানবিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে ছিল তার ভয়ংকর রূপ। সাথে আছে বিশাল বাহিনী আর টর্চার সেল। ফারাজকে যমের মতো ভয় পেতেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
কোনো অ্যাকশন মুভির দৃশ্য নয় কিংবা তিনি কোনো নায়ক কিংবা বিচারকও নন। তবে কখনো বাড়ির উঠানে আবার কখনও থানায় দরবার বসিয়ে রায় দিতেন চট্টগ্রাম ৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী। দল বল নিয়ে সব ভিডিও করে প্রচার করতেন নিজের ফেসবুক পেইজে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হলেও ভয়ে সবকিছু মেনে নিতেন ভুক্তভোগীরা।তারা বলেন, ফারাজ করিম যেটাই রায় দিতেন, সেটাই কাযকর হতো। অন্য কথা বলার সুযোগ কারো নেই।
রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে এমন দুটি পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা এখনও ফারাজ করিমের নাম শুনলে ভয়ে কেঁপে ওঠেন।পর্দার আড়াল থেকে এক মা জানান, তার দুই ছেলের উপর অত্যাচারের কথা।তারা এখনও ভয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে চাচ্ছে না।বাবা এমপি ছিলেন রাউজানের একচ্ছত্র অধিপতি। আর ছেলে ফারাজ যেন অঘোষিত যুবরাজ। মারামারির অভিযোগে পারভেজ ও শহিদুল নামের দুজনকে দিয়ে বহিরা বাজার ঝাড়ু দেয়ান ফারাজ করিম।
তার ক্ষমতার দাপটে অসহায় ছিল প্রশাসনও। এমপির ছেলে কীভাবে পুলিশের গাড়ি ব্যবহার ও থানায় বিচার করতেন, জানতে চাইলে তৎকালীন ওসি বলেন, গাড়ি ব্যবহারের সুযোগদানকারী ওই মোবাইল ডিউটি অফিসারকে তখন মনে হয় ক্লোজ করা হয় বা কৈফিয়ত তলব করেছিল।
বাবা এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর রাউজানের কুখ্যাত বাগান বাড়ির পেছনের জঙ্গলে সন্ধান মিলে ফারাজের কথিত টর্চার সেলের। গাজী মহসিন নামে একজনের জায়গা দখল করে এটি নির্মিত। জমি লিখে না দিলে বা অবাধ্য হলে বাহিনী দিয়ে ধরে এনে চালাতো নির্যাতন।
বা-ছেলের এই টর্চার সেলে অনেক মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভয়ে এতদিন চুপ থাকলেও তারা এখন বিচার চায়।কখনো মটিভেশনাল স্পিকার বা কখনো মানবিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখেছে রাউজানের মানুষ।জমের মতো ভয় পেয়ে জনপ্রতিনিধিরাও তার পেছনে পেছনে ছুটতো। তার অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি সামাজিক সংগঠনগুলোও। ৫ আগস্টের পর বাবা গ্রেফতার হলেও এখনও আত্মগোপনে ফারাজ করিম।